Header Ads Widget

Responsive Advertisement

জার্মানিতে ফেলনা উপাদানে তৈরি আস্ত ভবন

জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ দূষণের মতো একাধিক সংকটের প্রভাব শিল্পজগতকেও নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। বার্লিনে একটি ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে টেকসই পদ্ধতি ও উপাদানের অপচয় রোধের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। বার্লিনের অন্যতম সেরা ‘কো ওয়ার্কিং স্পেস’ হিসেবে পরিচিত ভবনটির বাইরের ও ভেতরের অংশ পুরোনো উপাদান দিয়ে তৈরি। কাঠ দিয়ে তৈরি এই কাঠামোটি কোনো এক সময়ে বিখ্যাত শিল্পী ইয়োকো ওনোর কফিনের ইনস্টলেশন ছিল। আজ সেখানে নিশ্চিন্তে বসে ফোনে কথা বলা ও কাজ করা যায়। বার্লিনের ব্যার্গহাইন ক্লাবের এক প্রদর্শনীর উপাদান দিয়ে ভবনের লকারগুলো তৈরি করা হয়েছে। একটি অফিস ভবনের ফেলে দেওয়া সোফা সংগ্রহ করে একটির সঙ্গে আরেকটি জুড়ে ‘সোফা ল্যান্ডস্কেপ' সৃষ্টি করা হয়েছে। ভবনটির ইন্টেরিয়র ডেকোরেটর সাশা স্ট্রেমিং বললেন, ‘আমরা কাঠমিস্ত্রিদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে কোথাও কিছু ভাঙা হলে সেখানে গিয়ে পুনর্ব্যবহারের উপযুক্ত জিনিসপত্র খুঁজি।’ ওপরতলায় এখনো নির্মাণকাজ চলছে। বার্লিনের সাবেক ব্রিউয়ারির জমিতে কথিত এই ‘সার্কুলার হাউস’ তৈরি হচ্ছে। মূলত নির্মাণকাজের বর্জ্যই নতুন ভবনের উপাদান। সাশা স্ট্রেমিং বললেন, ‘চক্রাকার নির্মাণের স্বপ্ন বাস্তবে করে দেখানোই সার্কুলার হাউসের মূলমন্ত্র। কেউ এর আগে এমন চেষ্টা চালায়নি। বাস্তবতা হলো, বিশ্বব্যাপী প্রায় ৪০ শতাংশ কার্বন নির্গমনের জন্য নির্মাণ খাত আর প্রায় ৬০ শতাংশের জন্য আবর্জনা দায়ী। ভবিষ্যতে নির্মাণকাজ যে অন্যভাবেও করা সম্ভব, আমরা এখানে ঠিক সেটাই দেখিয়ে দিতে চাই।’ ২০১৯ সাল থেকে নির্মাণকাজ চলছে। সামাজিক আবাসন ও কর্মক্ষেত্র হিসেবে ভবনটির চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার কথা রয়েছে। সেই লক্ষ্যে ব্রিউয়ারির পিপার গুদামে আরও তিনটি তলা যোগ করা হচ্ছে। একাধিক দপ্তর ও আটটি ফ্ল্যাট তৈরি হচ্ছে। যেসব মানুষের বার্লিনের আবাসন বাজারে ভাড়া নেওয়ার সামর্থ্য নেই, তাদেরকে এই ইউনিটগুলো ভাড়া দেওয়া হবে। সাশা স্ট্রেমিং বলেন, ‘প্রান্তিক মানুষেরা এখানে থাকার সুযোগ পাবেন। অর্থাৎ জন্মস্থান, গায়ের রং অথবা হয়তো বেতনের কারণে যে সব মানুষের বাসা ভাড়া নেওয়ার উপায় বা সামর্থ্য নেই, তাঁদের জন্যই এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এমন বৈচিত্র্যের স্বাদ পাওয়া ও সেই বৈচিত্র্যের জন্য স্পেস তৈরি করাই সবার জন্য বাড়তি পাওনা।’ ভবিষ্যতে ভবনটি আর কাজে না লাগলে যত বেশি সম্ভব উপাদানকে নতুন ভবন নির্মাণের কাজে ব্যবহার করাও এই উদ্যোগের লক্ষ্য। সে কারণে বেশিরভাগ অংশ বসাতে আঠার বদলে স্ক্রু ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া যতটা সম্ভব প্রাকৃতিক উপাদান কাজে লাগানো হয়েছে, যেগুলো ব্যবহারের পর প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যেতে পারে। সাশা স্ট্রেমিং বলেন, ‘আমাদের এখানে প্রকৃত কাঠের তৈরি সাদামাটা দেয়াল রয়েছে। খড় ঢুকিয়ে প্রাকৃতিক ইনসুলেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গোটা কাঠামোর ওপর কাদামাটি দিয়ে প্লাস্টার করা হয়।’ আরও পড়ুন ফেলনা জিনিস দিয়েই ঘর সাজাবেন যেভাবে ফেলে দেওয়া এমন অনেক পুরোনো জিনিসেই সাজাতে পারেন ঘর। রিসাইকেল করা (পুনর্ব্যবহারযোগ্য) উপাদান দিয়ে একটি বাড়ি তৈরি করতে হলে উপযুক্ত উপাদান সংগ্রহ করার প্রতিও বিশেষ মনোযোগ দিতে হয়। ‘কনকুলার’ নামের স্টার্টআপ কোম্পানি বাড়ি ভাঙার ধ্বংসস্তূপ থেকে উপকরণ সন্ধান, বাছাই ও বিক্রির ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করেছে। বাতি থেকে শুরু করে অব্যবহৃত রান্নাঘরের সব অংশ, কাচের দেয়াল ও অক্ষত লিফট— সবকিছুই সরবরাহ করতে পারে এই কোম্পানি। কোম্পানিটির প্রোজেক্ট ডেভেলপার আনাবেল ফন রয়টার্ন বলেন, ‘প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আমরা হয়তো অনেকটা টিন্ডারের মতো। চাহিদা ও জোগানের মধ্যে “ম্যাচ-মেকিং” করার মাধ্যমে মানুষ ও সরঞ্জাম পরস্পরের কাছে নিয়ে আসা হয়। অনন্তকালের জন্য নির্মাণের পর অর্থনৈতিক কারণে কখনো ১০ বছর পরেই বাড়ি ভেঙে ফেলার আইডিয়া আমার ও আমাদের মতে একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।’ আরও পড়ুন ফেলনা পোস্টার দিয়ে সুবিধাবঞ্চিতদের খাতা, ঠোঙা ফেলনা পোস্টার দিয়ে সুবিধাবঞ্চিতদের খাতা, ঠোঙা নির্মাণের ভবিষ্যতের জন্য এমন ধারণা সহজ মনে হলেও এই শিল্পশাখা উপাদানের চক্রাকার ব্যবহারের পথে যেতে চাইছে না। সাশা স্ট্রেমিং মনে করেন, সঠিক মানসিকতার অভাব অবশ্যই এর বড় কারণ। অন্যদিকে, এমনটা করতে হলে আরও অনেক দীর্ঘ পরিকল্পনার প্রক্রিয়া ও একেবারে ভিন্ন সরঞ্জামের প্রয়োজন রয়েছে। সে ক্ষেত্রে ব্যয়ও অনেক বেড়ে যায়। এমন বাস্তবতা সত্ত্বেও সার্কুলার হাউসের উদ্যোক্তারা এমন আইডিয়ার প্রতি আস্থা রাখেন। তাঁদের মতে, টেকসই নির্মাণ অবশ্যই সম্ভব এবং প্রয়োজনীয়। কারণ, মনে রাখতে হবে, পৃথিবীর সম্পদ কিন্তু সীমিত।

Post a Comment

0 Comments